বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অঞ্চল।
বরিশাল বিভাগ এর পরিচিতি ও ইতিহাস বর্ণনা।
- আপডেট সময় : ০৪:৩২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
- / 178
বরিশাল বিভাগ এর পরিচিতি ও ইতিহাস বর্ণনা-এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। নদী, হাওর, বিল এবং সুন্দরবনের ভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলটিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন এবং বাকেরগঞ্জের মতো অনেক ঐতিহাসিক ও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।
বরিশাল বিভাগের পরিচিতি
এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। ৬টি জেলা রয়েছে, প্রধানত কৃষিনির্ভর।
জেলার নাম | মোট এলাকা (বর্গকিলোমিটার) | জনসংখ্যা |
---|---|---|
বরিশাল | ২৭৯০.৫১ | ২৩,২৪,৩১০ |
পটুয়াখালী | ৩২২০.১৫ | ১৫,২১,৫৭৯ |
ভোলা | ৩৪০৩.৪৮ | ১৭,৭৬,২৯৫ |
পিরোজপুর | ১৩০৭.৬১ | ১১,১৩,২৫৭ |
ঝালকাঠি | ৭০৭.৪৩ | ৮,০২,০২৩ |
বরগুনা | ১৮৩১.৩১ | ১০,৩৯,৭৩৯ |
Credit: www.facebook.com
বরিশাল বিভাগ এর পরিচিতি ও ইতিহাস বর্ণনা-
ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইতিহাসের পাতায় বরিশাল নামটি বহুবার উঠে এসেছে। প্রাচীনকালে বরিশাল অঞ্চলকে “চন্দ্রদ্বীপ” বলা হতো।
মোগল আমল
মোগল আমলে বরিশাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। মোগল শাসকরা এখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন। বরিশালের চাঁদপুর, গৌরনদী, বাকেরগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়।
ব্রিটিশ আমল
ব্রিটিশ শাসনের সময় বরিশাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। এই সময়ে বরিশালে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রেলপথ স্থাপন করা হয়। বরিশাল শহরটি ব্রিটিশদের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বরিশাল অঞ্চলে অনেক যুদ্ধ হয়। এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বরিশাল বিভাগের মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
বরিশালের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ:
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক-বিংশ শতাব্দীর রাজনীতিবিদ। বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর-বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। জীবনানন্দ দাশ-(১৮৯৯-১৯৫৪) বিশ শতকের আধুনিক বাংলার কবি। সুফিয়া কামাল-একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক ও নারীবাদী। আবদুর রব সেরনিয়াবত- বিখ্যাত রাজনীতিবিদ। কামিনী রায়- লেখক ও সাহিত্যিক। সরদার ফজলুল করিম-সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যক্তি। আলতাফ মাহমুদ- সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির সুরকার। আবদুল গাফফার চৌধুরী-সুপরিচিত গ্রন্থকার, কলাম লেখক।
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী-পীর সাহেব নেছারাবাদ। সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক – পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সৈয়দ ফজলুল করিম – পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সৈয়দ রেজাউল করিম – পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
কবি- আসাদ চৌধুরী। কবি- মুকুন্দ দাস। বিপ্লবী নেতা নির্মল সেন। রাজনীতিবীদ-বেগম সেলিমা রহমান। অমৃত লাল দে। বৃটিশ বিরোধী কৃষক নেতা ও শহীদ রহিমউল্লাহসশস্ত্র বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী বলখী শাহ। জারী সম্রাট আবদুল গনি বয়াতী। শাহরিয়ার নাফীস- ক্রিকেটার। মেহেদী হাসান- ক্রিকেটার। সোহাগ গাজী- ক্রিকেটার। জাহিদ হাসান আমেলি- ফুটবলার।
মিঠুন চক্রবর্তী। হানিফ সংকেত। অভিনেতা নাসির খান। অভিনেতা মোশাররফ করিম। রাজীব ,চলচ্চিত্র অভিনেতা। সোহেল রানা, চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। মাসুম পারভেজ রুবেল, চলচ্চিত্র অভিনেতা
ওমর সানী, চলচ্চিত্র অভিনেতা। মোশাররফ করিম, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা। হাসান মাসুদ অভিনেতা, পরিচালক এবং গায়ক। তানিয়া আহমেদ-টেলিভিশন অভিনেত্রী ও মডেল। কাবিলা, চলচ্চিত্র অভিনেতা। জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, মডেল বাংলাদেশ ২০১৮।
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান
- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
- সুন্দরবন
- বাকেরগঞ্জ
- গুঠিয়া মসজিদ
- হিজলা
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত। এখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
বাকেরগঞ্জ
বাকেরগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। বাকেরগঞ্জের মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
গুঠিয়া মসজিদ
গুঠিয়া মসজিদ বরিশাল শহরের বিখ্যাত মসজিদ। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর মসজিদ। গুঠিয়া মসজিদে অনেক পর্যটক আসেন।
হিজলা
হিজলা আরেকটি সুন্দর স্থান। এখানে নদীর তীরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হিজলা একটি শান্তিপূর্ণ স্থান।
বরিশাল বিভাগের অর্থনীতি
অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। এখানে ধান, পাট, আম, কলা, নারকেল ইত্যাদি উৎপাদন হয়। বরিশাল বিভাগের নদীগুলো মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত।
কৃষি
মাটি উর্বর। এখানে ধান, পাট, গম, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি চাষ হয়। কৃষি বরিশাল বিভাগের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
মৎস্য
নদীগুলো মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। মৎস্য খাত বরিশাল বিভাগের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাণিজ্য
বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়। বরিশাল শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ ও সংস্কৃতিমনা। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হয়।
পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ প্রধান উৎসব। এই দিনে এখানকার মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। বিভিন্ন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজা অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূজায় বিভিন্ন মন্দিরে পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজা মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। মানুষ অতিথিপরায়ণ ও সংস্কৃতিমনা। বরিশাল বিভাগে ভ্রমণ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
Frequently Asked Questions
বিভাগের প্রতিষ্ঠা কবে?
প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল।
বরিশালের কতটি জেলা?
মোট ছয়টি জেলা রয়েছে। এগুলো হলো বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর এবং বরগুনা।
বরিশালের প্রধান পর্যটন স্থান কী?
প্রধান পর্যটন স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এটি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য বিখ্যাত।
বরিশালের প্রাচীন নাম কী ছিল?
প্রাচীন নাম ছিল চন্দ্রদ্বীপ। এটি ব্রিটিশ শাসনামলে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।