বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাওর ও জলাভূমি দেশের মোট ভূমির প্রায় 20% অংশ জুড়ে রয়েছে।
হাওর ও জলাভূমি: বাংলাদেশের অপার সম্পদের খনি !
- আপডেট সময় : ০২:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
- / 166
বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে হাওর ও জলাভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোট ১৭৪,৭৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ৩৭৩ টি হাওর, ১০০০ টি নদী, লক্ষাধিক খাল বিল বাংলাদেশের মোট ভূমির ৮.৮%। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হাওর ও জলাভূমি।
এশিয়ার বৃহৎ কৃত্রিম কাপ্তাই লেক বাংলাদেশকে করেছে অনিন্দ সুন্দর। পূর্বাঞ্চলের হা্ওরের গঠন শৈলী আর এর হিংশ্রতা মানুষকে সংগ্রামী আর কর্ম মূখর করেছে। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টিতে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলাভুমিকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভুমি উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন করেন। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭ টি জেলা সহ সারা দেশের জলাভূমিকে নিয়ে এই অধিদপ্তরের পথচলা। সমুদ্র ভাগের যে এলাকা ৬ মিটার গভীর সেটাও এর আওতাভূক্ত।
হাওরের তলদেশ রক্ষনাবেক্ষণ:
উজান থেকে ১৩ দেশের সমআয়তনের পাহাড় থেকে পানি নেমে আসে, সাথে নিয়ে আসে সেডিমেন্ট। জলাভূমির নাব্যতা বাড়াতে পারলে সারা বছর মাছ চাষ করে ৬গুন সাত গুন বেশী আয় করা সম্ভব হবে ফলে জিডিপির আকার বড় হবে, একইসাথে সমাজে মানি ফ্লো তৈরী হবে।
মাছের উৎপাদন:
দেশের মোট মাছের উৎপাদনের ৩০% হাওর ও জলাভূমি থেকে আসে। আমাদের দেশে ৩৭৩টি হাওর, ১০০০ নদী, লক্ষাধিক খালবিলে ১০০ কোটি মাছ ছাড়া যায় আবার প্রাকৃতিক মাছগুলোকে বাইক্কা বিল-এর মতো প্রাকৃতিকভাবে মাছ সংরক্ষণের মাধ্যমে এবং হাইব্রিড মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।পুষ্টি চাহিদা মিটবে এবং মিঠা পানির মাছ রপ্তানীও করা যাবে।
বৃক্ষ রোপন রাতার গুল মডেল :
প্রাকৃতিক ভাবে রাতার গুল পর্যটন এলাকার ন্যায় সকল হাওর রাতারগুল হতে পারে। জলাভূমিতে ১০০ কোটি গাছ লাগানো যেতে পারে। ‘রাতার গুল’ মডেল অনুসরণ করে গাছ লাগালে জলাভূমির পরিবেশ। গাছের গোড়ায় মাছ আশ্রয় নিবে এবং গাছের উপরে পাখী আশ্রয় নিতে পারবে। গাছগুলোর শিকড় বাধ কিংবা মাটি ক্ষয় হতে রক্ষা করে। কার্বন এমিশন ড্রামেটিক্যালী কমে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক দেশীয় প্রজাতি হিজল তমাল গাছও লাগনো যেতে পারে।
পর্যটন সম্ভাবনা তৈরীঃ
হাওর অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো। রেমাক্রি বা সাজেক-এর মতো মডেল অনুসরণ করে হাওর অঞ্চলে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা। হাওর ও জলাভূমিতে বেড়ানোর ব্যব্স্থা করা যায়। মানুষ যেখানে দুই ঘন্টার বেশী থাকে সেখানে বাথরুম থাকে ও সেখানে খাবার হোটেল রেস্তোরা থাকে জরুরি । কমিউনিটি বেজড পর্যটন পরিচালনা করা যেতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অথবা উপজেলা পরিষদ দেখভাল করতে পারে এবং তাদের আয়ও হতে পারে।
স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন:
‘আমার গ্রাম হবে আমার শহর’ নীতির আওতায় হাওর গ্রামগুলিকে প্রটেকশন ওয়াল দিয়ে ঘিরে সুইডেনের মডেল অনুসরণ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা ! গাছ লাগনো থাকবে বাগানের মতো, সোলার সিস্টেম থাকবে পুরো এলাকায়- আইটি সাপোর্ট , ওয়াই ফাই ব্যবহার, সেনিটেশন,খাবার ও পানি সবার জন্য সহজ লভ্য করা প্রয়োজন । বর্যার দিনে চলাচলে ওয়াক ওয়ে তৈরী করা ও সাইলো গোডাউন তৈরী করা অতিব জরুরী। মাছ রিজার্ভ করার জন্য স্টোরেজ নির্মান করা যেতে পারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন:
হাওর অঞ্চলে ১০০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করে মানুষের যাতায়াত ও বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা। হাওর অঞ্চলের ৩৭৩ হাওরের ৩৭টি উপজেলা প্রোপারকে কানেকটেড করে মানুষজনের মবিলিটি বাড়বে অপরদিকে পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যবে। অল ওয়েদার রোড যেটা বানানো হয়েছে তাতে করে পানি প্রবাহ কিংবা সেডিমেন্ট ও জলজ প্রাণীর চলাচলে মারাত্বক বিঘ্ন ঘটছে। ধরে নেয়া যায় আগামীতে এখানকার চরিত্র বদলে যাবে।
পরিবেশ উন্নয়ন:
নিয়মিত মাটি ড্রেজিং করে হাওর ও নদনদী সারাবছর নাব্য রাখা প্রয়োজন। মাটিগুলি দেশের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। জলাভূমি এলাকায় কয়েক কোটি গাছ লাগালে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, পর্যটনকে সহনশীল করতে পারলে মানুষের মনোজাগতিক উন্নয়ন ও অর্থ আয় বাড়বে। মাছ ও পাখীর অভয়ারন্য তৈরী করলে পরিবেশকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
কর্মসংস্থান :
উদ্যোক্তাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, হাস পালন প্রশিক্ষণ, সুটকী মাছ প্রস্তুতকরন, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভিং, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া । নার্সিং, ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা সহ নানাবিধ প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশের জন্য প্রস্তুত করা । এছাড়া এলাকা ভিত্তিক অন্যান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যুবকদেরকে বিদেশে প্রেরন করা যেতে পারে। দিনাজপুরের আশুরার বিল, নাটোরের চলন বিল, যশোরের ভবদহ বিল, টুংগীপাড়ার বর্ণি বাওড়, মুন্সিগঞ্জের আরিয়াল বিল, পার্বত্য এলাকার কাপ্তাই লেক, বগা লেক চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা, কুয়াকাটা বিচ, কক্সবাজার বিচ ইত্যাদিতে পর্যটন সহায়ক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। পরিদর্শন সহায়ক ও ইকো সিস্টেম উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিশাল জলাশয়গুলোকে হাওর বলা হয়। বর্ষাকালে নদীর পানি জমে এই হাওরগুলো তৈরি হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে ব্যাপক এলাকা বন্যারূপ ধারণ করে। হাওর আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য, খাদ্য, পানি, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, এবং অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।