বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল পরিচিতি
- আপডেট সময় : ০১:৫২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
- / 1479
দোয়েল পাখিদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর প্রকৃতি পাখি, বাংলাদেশের প্রকৃতিতে তার অনন্য ছোঁয়া আছে দোয়েলকে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি বলার কারণ,
বিতরণ: দোয়েল বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। শহর থেকে শুরু করে পাহাড়-বন কিংবা গ্রামের নির্জন পুকুরের পাড়েও এর দেখা মেলে। আমাদের দেশের খুব কম পাখির অবস্থান এমন। যে পাখি শহরে থাকে সে আর বনে থাকতে পারে না। কিন্তু দোয়েল সবখানেই রয়েছে। দোয়েলের গান মানুষের মনকে শান্ত করে।
সংস্কৃতি ও লোককাহিনীতে গুরুত্ব: দোয়েল বাংলা সংস্কৃতি ও লোককাহিনীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বাংলা সাহিত্যে দোয়েলের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও, দোয়েলকে নিয়ে অনেক লোককাহিনী প্রচলিত আছে।
দোয়েলের পরিচিতি
দোয়েল (বৈজ্ঞানিক নাম: Oriental Magpie Robin) একটি ছোট আকারের পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ১৫-২০ সেন্টিমিটার। এদের মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামী রঙের। বুক ও পেট সাদা। লেজ লম্বা এবং কালো। চোখ বাদামী। ঠোঁট লম্বা এবং কালো। পা ও পায়ের পাতা বাদামী।
দোয়েল সাধারণত জোড়ায় বা ছোট দলে বাস করে। এরা গাছের ডালে বা মাটিতে বাসা বাঁধে। বাসাটি লম্বাটে আকৃতির এবং ভেতরটা নরম পালক দিয়ে রেখে।
দোয়েল একটি শান্তিপ্রিয় পাখি। এরা মানুষের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে। এরা কীটপতঙ্গ, বীজ ও ফল খেয়ে জীবনধারণ করে।
সর্বব্যাপী বিস্তৃতি: দোয়েল বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম, পাহাড়-বন, সবখানেই এদের দেখা মেলে। এটি বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় পাখি।
সুমধুর কণ্ঠ: দোয়েলের কণ্ঠ অত্যন্ত সুমধুর। এদের গান শুনে মন জুড়ে যায়।
আভিজাত্য: দোয়েল একটি আভিজাত্যময় পাখি। এদের ভঙ্গিমা ও আচরণে এক ধরনের মাধুর্য ও লাবণ্য রয়েছে।
দোয়েলের আবাসস্থল
দোয়েল সাধারণত খোলা জায়গায় বাস করে। এরা বন-জঙ্গল, গ্রামের ক্ষেত-খামার, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ইত্যাদি স্থানে বাস করে।
দোয়েলের খাদ্য
দোয়েল মূলত কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়াও, এরা বীজ, ফুল, ফল ইত্যাদিও খায়।
দোয়েলের প্রজনন
দোয়েলের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে মাস। এ সময় এরা গাছের ডালে বাসা বাঁধে। একটি বাসা তৈরি করতে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। স্ত্রী দোয়েল ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ সাদা। ডিম ফুটতে ২১ দিন সময় লাগে। বাচ্চা দোয়েল ফোটার পর প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে উড়তে শিখে।
দোয়েলের সংরক্ষণ
দোয়েল একটি সুন্দর ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাখি। কিন্তু বর্তমানে দোয়েলের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ হলো:
বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে দোয়েলের আবাসস্থল কমে যাচ্ছে।
কীটনাশকের ব্যবহার: কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে দোয়েলের খাদ্যের উৎস কমে যাচ্ছে।
পাখি শিকার: কিছু মানুষ অবৈধভাবে দোয়েল শিকার করে।
দোয়েল সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
বন সংরক্ষণ: দোয়েলের আবাসস্থল রক্ষার জন্য বন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করা: কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করার মাধ্যমে দোয়েলের খাদ্যের উৎস রক্ষা করা যেতে পারে।
পাখি শিকার বন্ধ করা: পাখি শিকার বন্ধ করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
দোয়েল বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পাখি। এটি আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও লোককাহিনীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দোয়েল সংরক্ষণের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।