ঢাকা ০৪:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / 35

হাম হলো একটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। হাম একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যা প্রাথমিকভাবে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং সাধারণত শীতকালে বেশি দেখা যায়। হাম সাধারণত কাশি, সর্দি এবং জ্বরের সাথে শুরু হয় এবং পরে শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা এবং বমি হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাম থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও দরকার। মা-বাবাদের তাদের শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া আবশ্যক।

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: www.facebook.com

হামের পরিচিতি

হামের পরিচিতি

হাম হলো একটি সংক্রামক রোগ। এটি একটি ভাইরাস দ্বারা হয়। সাধারণত শিশুদের মধ্যে হাম বেশি দেখা যায়। হামের কারণে তীব্র জ্বর এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ঠান্ডার মতো। কিন্তু পরে তা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

হামের লক্ষণ

  • তীব্র জ্বর
  • শরীরে ফুসকুড়ি
  • গলা ব্যথা
  • চোখে লালচে ভাব
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • কাশি

হামের প্রকারভেদ

প্রকার বিবরণ
প্রাথমিক হাম এই প্রকারে মৃদু লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়।
গুরুতর হাম এই প্রকারে জ্বর এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো আরও তীব্র হয়।
জটিল হাম এই প্রকারে হাম থেকে অন্যান্য রোগ হতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া।

হামের কারণ

হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এটি প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগটি সহজেই এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হামের কারণগুলি সম্পর্কে জানলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

ভাইরাসের ভূমিকা

হামের প্রধান কারণ হলো মিজেলস ভাইরাস। মিজেলস ভাইরাস একটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাসটি মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

মিজেলস ভাইরাসটি একটি মরবিলিভাইরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়।

সংক্রমণের পদ্ধতি

  1. প্রাথমিক সংক্রমণ: মিজেলস ভাইরাস প্রথমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে।
  2. প্রসারণ পর্যায়: ভাইরাসটি শ্বাসনালী থেকে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
  3. সংক্রমণ পর্যায়: রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে ভাইরাসটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

হামের সংক্রমণ খুব দ্রুত ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। এটি একটি এয়ারবর্ন ভাইরাস। সংক্রমিত বস্ত্র, খাদ্য বা পানীয় থেকেও হাম ছড়াতে পারে।

সংক্রমণের মাধ্যম বিস্তারিত
হাঁচি বা কাশি মিজেলস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।
শ্বাস-প্রশ্বাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
সম্পর্কিত বস্তু সংক্রমিত বস্ত্র, খাদ্য বা পানীয় থেকেও হাম ছড়াতে পারে।

হাম প্রতিরোধের উপায়

হাম প্রতিরোধের উপায়

হাম একটি মারাত্মক রোগ। এটি ভাইরাস দ্বারা ছড়ায়। এই রোগের প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি। হাম প্রতিরোধের জন্য কিছু উপায় আছে। এই উপায়গুলো মেনে চলা উচিৎ।

টিকা প্রদান

হাম প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা প্রদান। শিশুদের এমআর টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা দুই ডোজে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ ৯ মাস বয়সে। দ্বিতীয় ডোজ ১৫ মাস বয়সে। টিকা দেওয়ার ফলে হাম প্রতিরোধ করা যায়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

হাম প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। হাত ধোয়া, মুখ ঢেকে রাখা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • হাত ধোয়া: সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে খাবারের আগে ও পরে।
  • মুখ ঢেকে রাখা: কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকতে হবে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা: নিয়মিত গোসল করতে হবে। পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।

এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হাম প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: m.youtube.com

হাম হলে করণীয়

হাম একটি সাধারণ রোগ যা শিশুদের বেশি দেখা যায়। হাম হলে সঠিক চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা হাম হলে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • শিশুকে বিশ্রাম দিন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করান।
  • জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে পারেন।
  • চোখ ও নাক পরিষ্কার রাখতে নরম কাপড় ব্যবহার করুন।
  • পরিষ্কার ও হালকা পোশাক পরিধান করান।

চিকিৎসকের পরামর্শ

  1. হামের লক্ষণ শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  2. চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে পারেন।
  3. চিকিৎসক ভিটামিন এ দিতে পারেন।
  4. চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন, সংক্রমণ রোধে।

হামের জটিলতা

হাম একটি সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগ হলেও, এটি বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হামের জটিলতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

হামের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অনেক রকম হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ প্রভাবগুলির মধ্যে:

  • মস্তিষ্কের প্রদাহ: হামের সংক্রমণে এনসেফালাইটিস হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ যা স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
  • শ্রবণশক্তি হারানো: হামের সংক্রমণ কানের স্নায়ুগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে শ্রবণশক্তি হারানো সম্ভব।
  • দৃষ্টি সমস্যা: হাম চোখের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে।

জরুরি পরিস্থিতি

হামের সংক্রমণে কিছু জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলি দ্রুত চিকিৎসা না করলে মারাত্মক হতে পারে।

অবস্থা বিবরণ
নিউমোনিয়া: হামের ফলে ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। এটি শিশুদের জন্য বিশেষত বিপজ্জনক।
ডায়রিয়া: হামের সংক্রমণে তীব্র ডায়রিয়া হতে পারে। এটি শরীরের প্রচুর জলহানি করতে পারে।
মস্তিষ্কের প্রদাহ: হামের কারণে এনসেফালাইটিস হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: m.youtube.com

হাম সম্পর্কে ভুল ধারণা

হাম একটি সাধারণ রোগ হলেও, এটি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এসব ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আসুন হাম সম্পর্কিত কিছু সাধারণ ভুল ধারণা সম্পর্কে জানি।

টিকার ভুল ধারণা

হাম টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু অনেকেই এই বিষয়ে বিভ্রান্ত।

  • টিকা নিরাপদ নয়: অনেকেই মনে করেন হাম টিকা নিরাপদ নয়, যা ভুল। হাম টিকা নিরাপদ এবং কার্যকর।
  • টিকা অকার্যকর: কেউ কেউ ভাবেন টিকা কাজ করে না। কিন্তু গবেষণা প্রমাণ করেছে যে টিকা অত্যন্ত কার্যকর।
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষ ভয় পান টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। কিন্তু টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত মৃদু এবং সাময়িক।

সংক্রমণ সম্পর্কে মিথ

হাম সংক্রমণ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে।

  1. শুধু শিশুদের হয়: অনেকে মনে করেন হাম শুধু শিশুদের হয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও হাম আক্রান্ত হতে পারেন।
  2. বাতাসে ছড়ায় না: কেউ কেউ ভাবেন হাম কেবল সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। কিন্তু হাম বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
  3. একবার হলে আর হয় না: অনেকে মনে করেন একবার হাম হলে দ্বিতীয়বার হয় না। কিন্তু দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে দ্বিতীয়বারও হতে পারে।

এসব ভুল ধারণা থেকে মুক্ত থেকে সঠিক তথ্য জানুন এবং হাম প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিন।

Frequently Asked Questions

হাম কী?

হাম একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

হাম কিভাবে ছড়ায়?

হাম বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। কাশি বা হাঁচির সময় ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

হাম এর লক্ষণ কি?

হামের লক্ষণ হলো জ্বর, কাশি, চোখ লাল হওয়া, এবং চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি।

হাম প্রতিরোধে কি করা উচিত?

হাম প্রতিরোধে টিকা দেওয়া উচিত। শিশুদের এম. এম. আর টিকা দেওয়া হলে হাম প্রতিরোধ করা যায়।

Conclusion

হাম প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে টিকা নিলে এই রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টিকা কর্মসূচি সফল হলে হাম নির্মূল করা সম্ভব। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে হাম প্রতিরোধ করা সহজ। সুরক্ষিত থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

আপডেট সময় : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

হাম হলো একটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। হাম একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যা প্রাথমিকভাবে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং সাধারণত শীতকালে বেশি দেখা যায়। হাম সাধারণত কাশি, সর্দি এবং জ্বরের সাথে শুরু হয় এবং পরে শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা এবং বমি হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাম থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও দরকার। মা-বাবাদের তাদের শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া আবশ্যক।

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: www.facebook.com

হামের পরিচিতি

হামের পরিচিতি

হাম হলো একটি সংক্রামক রোগ। এটি একটি ভাইরাস দ্বারা হয়। সাধারণত শিশুদের মধ্যে হাম বেশি দেখা যায়। হামের কারণে তীব্র জ্বর এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ঠান্ডার মতো। কিন্তু পরে তা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

হামের লক্ষণ

  • তীব্র জ্বর
  • শরীরে ফুসকুড়ি
  • গলা ব্যথা
  • চোখে লালচে ভাব
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • কাশি

হামের প্রকারভেদ

প্রকার বিবরণ
প্রাথমিক হাম এই প্রকারে মৃদু লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়।
গুরুতর হাম এই প্রকারে জ্বর এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো আরও তীব্র হয়।
জটিল হাম এই প্রকারে হাম থেকে অন্যান্য রোগ হতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া।

হামের কারণ

হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এটি প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগটি সহজেই এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হামের কারণগুলি সম্পর্কে জানলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

ভাইরাসের ভূমিকা

হামের প্রধান কারণ হলো মিজেলস ভাইরাস। মিজেলস ভাইরাস একটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাসটি মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

মিজেলস ভাইরাসটি একটি মরবিলিভাইরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়।

সংক্রমণের পদ্ধতি

  1. প্রাথমিক সংক্রমণ: মিজেলস ভাইরাস প্রথমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে।
  2. প্রসারণ পর্যায়: ভাইরাসটি শ্বাসনালী থেকে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।
  3. সংক্রমণ পর্যায়: রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে ভাইরাসটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

হামের সংক্রমণ খুব দ্রুত ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। এটি একটি এয়ারবর্ন ভাইরাস। সংক্রমিত বস্ত্র, খাদ্য বা পানীয় থেকেও হাম ছড়াতে পারে।

সংক্রমণের মাধ্যম বিস্তারিত
হাঁচি বা কাশি মিজেলস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।
শ্বাস-প্রশ্বাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
সম্পর্কিত বস্তু সংক্রমিত বস্ত্র, খাদ্য বা পানীয় থেকেও হাম ছড়াতে পারে।

হাম প্রতিরোধের উপায়

হাম প্রতিরোধের উপায়

হাম একটি মারাত্মক রোগ। এটি ভাইরাস দ্বারা ছড়ায়। এই রোগের প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি। হাম প্রতিরোধের জন্য কিছু উপায় আছে। এই উপায়গুলো মেনে চলা উচিৎ।

টিকা প্রদান

হাম প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা প্রদান। শিশুদের এমআর টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা দুই ডোজে দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ ৯ মাস বয়সে। দ্বিতীয় ডোজ ১৫ মাস বয়সে। টিকা দেওয়ার ফলে হাম প্রতিরোধ করা যায়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

হাম প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। হাত ধোয়া, মুখ ঢেকে রাখা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • হাত ধোয়া: সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে খাবারের আগে ও পরে।
  • মুখ ঢেকে রাখা: কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকতে হবে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা: নিয়মিত গোসল করতে হবে। পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।

এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হাম প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: m.youtube.com

হাম হলে করণীয়

হাম একটি সাধারণ রোগ যা শিশুদের বেশি দেখা যায়। হাম হলে সঠিক চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা হাম হলে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • শিশুকে বিশ্রাম দিন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করান।
  • জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে পারেন।
  • চোখ ও নাক পরিষ্কার রাখতে নরম কাপড় ব্যবহার করুন।
  • পরিষ্কার ও হালকা পোশাক পরিধান করান।

চিকিৎসকের পরামর্শ

  1. হামের লক্ষণ শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  2. চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে পারেন।
  3. চিকিৎসক ভিটামিন এ দিতে পারেন।
  4. চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন, সংক্রমণ রোধে।

হামের জটিলতা

হাম একটি সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগ হলেও, এটি বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হামের জটিলতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

হামের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অনেক রকম হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ প্রভাবগুলির মধ্যে:

  • মস্তিষ্কের প্রদাহ: হামের সংক্রমণে এনসেফালাইটিস হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ যা স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
  • শ্রবণশক্তি হারানো: হামের সংক্রমণ কানের স্নায়ুগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে শ্রবণশক্তি হারানো সম্ভব।
  • দৃষ্টি সমস্যা: হাম চোখের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে।

জরুরি পরিস্থিতি

হামের সংক্রমণে কিছু জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলি দ্রুত চিকিৎসা না করলে মারাত্মক হতে পারে।

অবস্থা বিবরণ
নিউমোনিয়া: হামের ফলে ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। এটি শিশুদের জন্য বিশেষত বিপজ্জনক।
ডায়রিয়া: হামের সংক্রমণে তীব্র ডায়রিয়া হতে পারে। এটি শরীরের প্রচুর জলহানি করতে পারে।
মস্তিষ্কের প্রদাহ: হামের কারণে এনসেফালাইটিস হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
হাম: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Credit: m.youtube.com

হাম সম্পর্কে ভুল ধারণা

হাম একটি সাধারণ রোগ হলেও, এটি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এসব ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আসুন হাম সম্পর্কিত কিছু সাধারণ ভুল ধারণা সম্পর্কে জানি।

টিকার ভুল ধারণা

হাম টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু অনেকেই এই বিষয়ে বিভ্রান্ত।

  • টিকা নিরাপদ নয়: অনেকেই মনে করেন হাম টিকা নিরাপদ নয়, যা ভুল। হাম টিকা নিরাপদ এবং কার্যকর।
  • টিকা অকার্যকর: কেউ কেউ ভাবেন টিকা কাজ করে না। কিন্তু গবেষণা প্রমাণ করেছে যে টিকা অত্যন্ত কার্যকর।
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষ ভয় পান টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। কিন্তু টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত মৃদু এবং সাময়িক।

সংক্রমণ সম্পর্কে মিথ

হাম সংক্রমণ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে।

  1. শুধু শিশুদের হয়: অনেকে মনে করেন হাম শুধু শিশুদের হয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও হাম আক্রান্ত হতে পারেন।
  2. বাতাসে ছড়ায় না: কেউ কেউ ভাবেন হাম কেবল সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়। কিন্তু হাম বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
  3. একবার হলে আর হয় না: অনেকে মনে করেন একবার হাম হলে দ্বিতীয়বার হয় না। কিন্তু দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে দ্বিতীয়বারও হতে পারে।

এসব ভুল ধারণা থেকে মুক্ত থেকে সঠিক তথ্য জানুন এবং হাম প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিন।

Frequently Asked Questions

হাম কী?

হাম একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

হাম কিভাবে ছড়ায়?

হাম বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। কাশি বা হাঁচির সময় ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

হাম এর লক্ষণ কি?

হামের লক্ষণ হলো জ্বর, কাশি, চোখ লাল হওয়া, এবং চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি।

হাম প্রতিরোধে কি করা উচিত?

হাম প্রতিরোধে টিকা দেওয়া উচিত। শিশুদের এম. এম. আর টিকা দেওয়া হলে হাম প্রতিরোধ করা যায়।

Conclusion

হাম প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে টিকা নিলে এই রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টিকা কর্মসূচি সফল হলে হাম নির্মূল করা সম্ভব। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে হাম প্রতিরোধ করা সহজ। সুরক্ষিত থাকুন, সুস্থ থাকুন।