৭১ এর রণাঙ্গন ও জিয়াউর রহমান
- আপডেট সময় : ০২:৪৬:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
- / 375
যেকোন জাতির জীবনে বা একটি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্যাদাকার এবং গৌরবময় অধ্যায় সে জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস।বাংলাদেশ নামক ব দ্বীপে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীর জন্যও সব থেকে গৌরবের জায়গা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা।বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও একটি রক্তস্নাত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা বাংলাদেশীদের জন্য সব থেকে গর্বের।মহান এই স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সারিতে থেকে বিজয়ের শেষ দিন পর্যন্ত যারা নেতৃত্ব প্রদান করেছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দ্বারা দীর্ঘদিন সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত পর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এক সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।তখন হঠাৎ করেই তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের নীরব ভূমিকায় দিশাহীন হয়ে পড়ে দেশের সকল মুক্তিকামী জনগণ।
জনগণের মাঝে এক বিরাট শঙ্কা চলে আসে তাহলে কি দীর্ঘ ২৩ বছরের মুক্তি সংগ্রাম নেতৃত্বহীনতায় ব্যর্থতায় রূপ নিবে?
ঠিক এমন সময়ই চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন আর্মি অফিসার পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিশ্চিত মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ২৬শে মার্চ মধ্যরাতে সেই কাঙ্খিত স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।দিশাহীন জাতি পায় মুক্তি সংগ্রামের নির্দেশনা।একজন সামরিক অফিসারের তেজস্বী কন্ঠ সমগ্র জনগণের হৃদয়ে এক উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ তুলে দিয়েছিলো,উদ্দীপ্ত করেছিলো মুক্তিকামী জনতার হৃদয়কে।বৃদ্ধ থেকে কিশোর সকলে দলমত নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো মুক্তির সংগ্রামে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরণ ঘটে একজন কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।নেতৃত্ববিহীন দিশাহারা জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবান এবং রণাঙ্গনে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বের ঐতিহাসিক ভূমিকা স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে যারা সর্বময় ক্ষমতা করায়ত্ত করেছিলেন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম দিন থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকা বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও প্রকৃত ইতিহাস রচনা অসম্ভব।
মেজর জিয়ার তেজস্বী কন্ঠের ঘোষণা বাংলাদেশের ঝিমিয়ে পড়া লক্ষ-কোটি মানুষকে যেমন জাগিয়ে তুলেছিল তেমনই তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিতে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েই নিজের কাজ শেষ করেননি। তিনি যুদ্ধ করেছেন রণাঙ্গণে। গঠন করেছিলেন নিজস্ব জেড ফোর্স বাহিনী, নেতৃত্ব দিয়েছেন তার অধীনে ‘জেড’ ফোর্সের সেনানীদের, পরিচালনা করেছেন বিশাল এক সেনাবাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই দেশকে কিছু সেক্টরে ভাগ করে সুসংহতভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। এমন পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের জন্যে কিছু ব্রিগেড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিশেষভাবে সম্মুখ যুদ্ধের জন্যে। কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে অনুষ্ঠিত ‘সেক্টর কমান্ডার’ সভায় মুক্তিবাহিনীর প্রথম ব্রিগেড অব গঠন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমান পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং তৎকালীন সময়ে উপস্থিত সদস্যের মধ্যে তিনি সবচাইতে সিনিয়র হওয়ায় ব্রিগেডটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্রিগেড গঠন করা হয়। ব্রিগেডটির সদর দফতর ছিলো তুরা এর তেলঢালা, ভারত। এই জেড ফোর্সের দ্বারা কুড়িগ্রামের রৌমারি, শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার নকশি সীমান্ত ফাঁড়ি, ঘাসিপুরে, কমলপুর সীমান্ত ফাঁড়ি, বাহাদুরাবাদ যুদ্ধ, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, চিলমারী, হাজীপাড়া, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলাই চা-বাগান, ধামাই চা-বাগান, জকিগঞ্জ, আলি-ময়দান, এমসি কলেজ, ভানুগাছ, কানাইঘাট, বয়মপুর, ফুলতলা চা-বাগান, সাগরনালা চা-বাগান, লাতু, বড়লেখা প্রভৃতি এলাকায় যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।
ইতিহাসে হাতেগোনা যে কয়জন সামরিক অফিসার দেশের জন্য দু- দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে লড়াই করার গৌরব অর্জন করেছেন এবং জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাদের একজন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক- ভারত যুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।দিশাহীন জাতিকে আলোর পথ দেখানো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাকারী হলেও ক্ষমতালোভী এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারীরা এটা মানতে রাজি নন অথচ তিনি জীবিত থাকাকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাকারী নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। অথচ দল-মত নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করেন, ১৯৭১ সালের মার্চের সেই ঐতিহাসিক দুর্যোগের সময় বেতারে ভেসে আসা তার কণ্ঠস্বর বিদ্যুৎস্পর্শের মতো জাতিকে নাড়া দিয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শহীদ জিয়াই সর্বপ্রথম ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে বিদ্রোহ করেন। এর মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে চট্টগ্রামে তার অধীনস্থ সৈন্যদের নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু করেন তিনি। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তিনি অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে ‘জেড ফোর্স’- এর প্রধান হিসেবে দুঃসাহসী সেনানায়কের একটা আলাদা পরিচয় অর্জন করেন জিয়া এবং বীর উত্তম খেতাব লাভ করেন।
তবে আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ ছাড়া মানুষ তার এই পুরস্কারের কথা উল্লেখ করে না। মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অনুরূপ আরো দুটি বাহিনী গঠিত হয়েছিল- মেজর শফিউল্লাহর অধিনায়কত্বে ‘এস’ ফোর্স এবং মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ‘কে’ ফোর্স। প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, উচ্চমান নৈতিকতার অধিকারী সৈনিক জিয়া সেনাবাহিনীর বৃত্তের বাইরে কোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেননি। তদানীন্তন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর নিয়মিত কাজের বাইরে তেমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হননি। তবে ইতিহাসই জিয়াউর রহমানকে বার বার পাদপ্রদীপের আলোতে নিয়ে এসেছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্ফূরণ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর।১৯৭৫ সালে ৭ই নভেম্বর আবারো বেতারে ভেসে আসে ‘জিয়া বলছি,নতুন আহবান,নতুন ডাক’। আরো একবার প্রেক্ষাপট রচনা করলেন এই সমর নায়ক।এই প্রেক্ষপটে তিনি সামিল হলেন জনগণের কাতারে।আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধের নায়ক হিসেবে দাড়ালেন সমগ্র জাতির সঙ্গে,জড়িত হলেন রাষ্ট্র পরিচালনায়। স্বল্পতম সময়ে তা নিজস্ব আলোকছটায় গোটা দেশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোকিত করে তোলে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি গোটা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, এক নতুন আগামীর জন্য জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছেন এবং তাদেরকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। উপরন্তু, স্বনির্ভরতা অর্জন এবং একটি আধুনিক ও মর্যাদাবান বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি জাতিকে দিয়েছেন নির্দেশনা। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস- যুদ্ধদিনের সহযোগীরাই তার জীবনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে!
এ কথা সর্বজন বিদিত যে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নিপীড়নমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে এবং দেশের জনগণকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্র রচনা করেন। বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়ে। তিনি বেসরকারি ব্যাংক-বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। আজকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্ক তার ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি। ইউরোপও তখন থেকে আগ্রহী হয় বাংলাদেশ সম্পর্কে। যে চীন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল, সেই চীনের সঙ্গেও গড়ে ওঠে বাংলাদেশের হৃদ্যতা। ওই সময় থেকেই ৫৭টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গড়া ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) তথা মুসলিম বিশ্ব বাংলাদেশের অকৃত্রিম মিত্রে পরিণত হয় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপের জন্য।
মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন আল-কুদস কমিটির সদস্য হয় বাংলাদেশ। সৌদি আরবও হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আরাফাত ময়দানে সারি সারি রোপিত নিমগাছ এখনো সৌদি আরব-বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধের জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধ-অবস্থা নিরসনের দায়িত্ব আসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর।
অন্যদিকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ লাভ করে। এখন শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নির্ভীক সেনানিরা যে ভূমিকা পালন করে চলছেন, তার সূচনা তখন থেকেই।
এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারত সফরে গেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি তার সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় বলেছিলেন, “একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাকারী হিসেবে আপনার মর্যাদা এরইমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতীয় অগ্রগতি এবং জনকল্যাণে নিবেদিত একজন জননেতা হিসেবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে আপনি গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন”।
মোটকথা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন বড়-ই বিচিত্র। বাংলাদেশি জাতির প্রতিটি প্রয়োজনের মুহূর্তে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। তাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন তিনি। সেই সাফল্যের পেছনে ছিল তার নিজস্ব চিন্তা এবং জনমানুষের জন্য কাজ করার একাগ্র চিত্ত। সেই চিন্তা ও একাগ্রতাই বাংলাদেশীদের একটি আত্ননির্ভরশীল পথে হাঁটতে শিখিয়েছে। তারই প্রদর্শিত পথ ছিল বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে ইমার্জিং টাইগারে রূপান্তর করার কথা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনরায় নির্মাণের জন্য এবং পৃথিবীর বুকে একে একটি শক্তিশালী আত্মনির্ভরশীল ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হন। এছাড়াও
স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনায় একটি আধুনিক সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য কিছু অবদানঃ-
১. ২৬ মার্চ , ১৯৭১ সালে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘষনা করেন
২.মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু সেক্টর কমান্ডার হিসাবেই নয় , তিনটি সেক্টর নিয়ে গঠিত জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসাবেও দ্বায়িত্ব পালন করেন
৩..৭ ই নবেম্বর , ১৯৭৫ তারিখে সীপাহি জননেতা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব রক্ষা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রনায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করেন
৪.একুশে পদক প্রবর্তন ( ১৯৭৭ )
৫.শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা (১৯৭৬ )
৬.বাংলা একাডেমির উন্নয়নে ‘বাংলা একাডেমি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮’ জারি করেন
৭.১৯৭৮ সালে ৪ বিভাগীয় শহরে ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করেন
৮.১৯৭৯ সালে শাহবাহগে শিশুপার্ক স্থাপন করেন
৯.১৯৭৬ সালে শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশকে ত্ব্ররান্বিত করতে পুনরায় রিয়েলিটি টেলিভিশন প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুড়ি’ আয়োজন করেন
১০.১৯৮০ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে নিরক্ষতা দূরীকরণ কর্মসূচী গ্রহন করেন
১১.সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসাবে সার্ক গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন
১২.দূর্নীতি অবসান ঘটিয়ে ব্যয়ভিত্তিক সমাজ গঠন করেন
১৩.১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দলনীতি জারি করেন
১৪.পল্লি চিকিৎসা ব্যবস্তা প্রবর্তন করেন এবং প্রথম বছরেই ২৭০০ জনকে পল্লি চিকিৎসক হিসাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
১৫.১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পঞ্চম সংশোধনীয় মাধ্যমে বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন
১৬.দেশের কৃষিভিত্তিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সেচের পানির অপ্রাতুলতা লাঘবে দেশব্যাপী ১৪০০০ খাল কর্মসূচী করেন
১৭.ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন
১৮.আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে বিভিন্ন দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করেন
১৯.নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা করেন
২০.তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত ও মহিলা অদিটর জেনারেল নিয়োগ করেন
২১.মহিলা পুলিশ ,আনসার ও ভিডিপি বাহিনি করেন
২২.জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১৫ থেকে ৫০ এ উন্নীত করেন
২৩.১৯৮০ সালে যৌতুক বিরোধী আইন প্রনয়ন করেন
২৪.১৯৭৮ সালে কুয়েতে ৬০৮৭ জন শ্রমিক পাঠানোর মাধ্যমে বিদেশে মানবসম্পদ পাঠানোর সূচনা হয়
২৫.শেখ মুজিবের আমলে সরকারিকরনের ফলে মৃতপ্রায় কলকারখানাগুলো বেসরকারিকরণের মাধ্যোমে শীল্পখাতকে ধ্বংশের মুখ থেকে রক্ষা করেন
২৬.১৯৭৭ সালে দেশে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠার মাধ্যোমে পোশাক শিল্পের সুচনা করেন
২৭.১৯৮১ সালে ঢাকায় এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন
২৮.তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন
২৯.উপজাতীয় সাংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসার এর লক্ষ্যে রাঙ্গামাটিতে ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ‘ ( বর্তমান নাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন
৩০.সংবাদপত্র ও গনমাধ্যম বিকাশের জন্য ‘প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ ( পিআইবি ) প্রতিষ্ঠা করেন
৩১.শহিদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতিয়বাদী দল – বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালীন ঘষনাপত্রের ২১ নং ধারায় বাংলাদশে একটি ‘গনমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম ‘চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল
৩২.উৎপাদনমূখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ জিয়া ঢাকায় একটি জাতীয় শিক্ষা ওয়ার্কসপ আয়োজন করেন | এতে শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত সাড়াদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষাবিষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন
৩৩.একটি সময়োপযোগী অন্তর্বতী শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে একটি জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন
৩৪.১৯৭৬ সালে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা পরিষদ ‘ গঠন করেন
৩৫.শিক্ষার প্রসারে গ্রন্থগারকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৮০-৮১ , অর্থ বছরে ‘থানা পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। আজকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তার নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে কিন্তু দেশের আপামর জনগণের হৃদয়ের গভীরে এবং ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ধূলিকণায় যার বিদ্যমান রয়েছে তা কখনও বিলীন করা অসম্ভব।
– নাহিদুজ্জামান শিপন,
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।