ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা জেল হত্য দিবস।

ডেস্ক রিপোর্ট,
  • আপডেট সময় : ০১:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩
  • / 412

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫। এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, সেনাবাহিনীর একদল অফিসার ক্ষমতা দখল করে এবং নিজেদেরকে সরকার হিসেবে ঘোষণা করে। এই অফিসারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা ছিলেন।

খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং তার অনুসারীরা ভয় করছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর সহযোগীরা তাদের ক্ষমতায় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই তারা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে ভোর রাতে, একটি দল সেনা সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে। তারা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে তাদের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।

সেনা সদস্যরা তাদেরকে একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা তাজউদ্দীন আহমদকে গুলি করে হত্যা করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গুলি করে হত্যা করে এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড দেশের ইতিহাসে একটি গভীর প্রভাব ফেলে। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় একটি বড়ধাক্কা লাগে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

হত্যাকাণ্ডের বিচার

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়।

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখকে বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা জেল হত্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন শোক সভা ও সমাবেশের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড একটি নারকীয় ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা জেল হত্য দিবস।

আপডেট সময় : ০১:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫। এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, সেনাবাহিনীর একদল অফিসার ক্ষমতা দখল করে এবং নিজেদেরকে সরকার হিসেবে ঘোষণা করে। এই অফিসারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা ছিলেন।

খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং তার অনুসারীরা ভয় করছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর সহযোগীরা তাদের ক্ষমতায় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই তারা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে ভোর রাতে, একটি দল সেনা সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে। তারা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে তাদের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।

সেনা সদস্যরা তাদেরকে একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা তাজউদ্দীন আহমদকে গুলি করে হত্যা করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গুলি করে হত্যা করে এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড দেশের ইতিহাসে একটি গভীর প্রভাব ফেলে। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় একটি বড়ধাক্কা লাগে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

হত্যাকাণ্ডের বিচার

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়।

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখকে বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা জেল হত্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন শোক সভা ও সমাবেশের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড একটি নারকীয় ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়।