পটুয়াখালী জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

- আপডেট সময় : ০৯:১১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
- / 918
পটুয়াখালী জেলার পরিচিত বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এটি বরিশাল বিভাগে অবস্থিত। পটুয়াখালী জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাসের জন্য পরিচিত।
পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস
পটুয়াখালী জেলার অতীত ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। এই জেলার নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বেশ কিছু উপাখ্যান রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ‘পটুয়া’ শব্দ থেকে পটুয়াখালীর উৎপত্তি। প্রাচীন ইতিহাস; প্রাচীনকালে এই স্থানটি একটি বন্দর ছিল। অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে আসতেন। মধ্যযুগীয়; মধ্যযুগীয় যুগে এই অঞ্চলটি মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল আমলে এখানে অসংখ্য ভবন নির্মিত হয়েছিল।
পটুয়াখালী জেলার পটভূমি
বর্তমান পটুয়াখালী শহরটি প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো। মিঃ বেটি ১৮০৭ সালে বরিশালের একজন জজ ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বেটির আমলে ১৮১২ সালে দক্ষিণ পটুয়াখালীতে সুন্দরবন উচ্ছেদের মাধ্যমে বসতি স্থাপন করা হয় এবং মির্জাগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। লৌকাঠী চৌকির মুনসেফ ছিলেন ব্রজ মোহন দত্ত। পটুয়াখালীর মহকুমা সংযুক্তির প্রস্তাব ব্রজ মোহন দত্ত পটুয়াখালীর একটি নতুন মহকুমা প্রস্তাব করেছিলেন। ১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৮৭১ সালে এটিকে পটুয়াখালী মহকুমায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
পটুয়াখালী জেলার ভূমিকা পটুয়াখালী জেলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য,এই জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এর উত্তরে বরগুনা জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে ঝালকাঠি জেলা অবস্থিত। অবস্থান এবং এলাকা; ভূগোল দ্বীপটি ২১.৫২ উত্তর থেকে ২২.৩৬ উত্তর এবং ৯০.০৮ পূর্ব থেকে ৯০.৪৫ পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত। আয়তন: ৩২২২.৬৮ বর্গকিলোমিটার।
ভিডিও ক্রেডিট : Mr Luxsu
পটুয়াখালী জেলার অর্থনীতি
অর্থনীতি পটুয়াখালীর অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এই অঞ্চলে ধান, পাট, মাছ এবং নারিকেল চাষ করা হয়।
ধান: প্রধান খাদ্যশস্য। পাট: প্রধান অর্থকরী ফসল। নারকেল: পটুয়াখালীতে আরও একটি বিশেষ ধরণের নারিকেল রয়েছে।
মৎস্য চাষ:পটুয়াখালী জেলার খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। তাই এখানে মাছ চাষ একটি বৃহৎ শিল্প।
ফল উৎপাদন
দক্ষিণ হল দেশের জেলা এবং এই অঞ্চলে তরমুজ, নারিকেল, গাজর, কাঁঠাল, আম, লিচু, আনারস ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি, এই অঞ্চলটি তরমুজের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
বন
পটুয়াখালী জেলায় বনভূমি খুবই কম। বনাঞ্চলে পাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাছ হল কেওড়া, গেওয়া, কাকড়া, বাবুল, শিরীষ, কড়ই, হিজল, গাব, গোলপাতা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন -চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
শিল্প ও বাণিজ্য
কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, পাট শিল্প, বিড়ি শিল্প, মৎস্য ব্যবসা, গাছ ব্যবসা, চাল, ডাল ব্যবসা। ব্যবসা-বাণিজ্য: পটুয়াখালীর ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। অটো রাইস মিল, রাইস মিল, ইটের ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, সিনেমা হল, ফিলিং স্টেশন, ব্যাংক এবং বীমা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা
শিক্ষা পটুয়াখালী জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিম্নরূপ: (ক) কলেজ আসাদুজ্জামান মহিলা কলেজ, পটুয়াখালী পটুয়াখালী সরকারি। এখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PSTU): পটুয়াখালীর একটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পটুয়াখালীর সংস্কৃতি পটুয়াখালী জেলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটুয়াখালী জেলা তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। শহরে বেশ কয়েকটি উৎসব, মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য পটুয়াখালীতে একটি চিত্তাকর্ষক উৎসব। দুর্গাপূজা: এটি পটুয়াখালীতে একটি বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব।
পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ
রফিকুল ইসলাম – শহীদ বুদ্ধিজীবী ও অধ্যাপক। দীনেশ-চন্দ্র সেন। আবদুস ছাত্তার মল্লিক- সংগঠকদের একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ। লাবণ্য প্রভা দত্ত – ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সহযোগী। আলতাফ হোসেন চৌধুরী – প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধান; রাজনীতিবিদ। এম এ মুনম – প্রাক্তন সেনা মেজর এবং প্রাক্তন মন্ত্রী। নুরুল হক নূর – সাবেক ডাকসুর ভিপি।
তানিয়া আহমেদ – অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক। ওয়াসিমুল বারী রাজীব – অভিনেতা। বিজোরী বরকতুল্লাহ- অভিনেত্রী। সোহাগ গাজী – ক্রিকেটার। কামরুল ইসলাম-রাব্বি ক্রিকেটার। অহনা রহমান লাকী –- অভিনেত্রী। ইতালিকা রহমান –– সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার শিরোনাম এবং লাক্স চ্যানেল আই-এর রানার আপ। রেজওয়ানা চৌধুরী- বন্যা- সঙ্গীতশিল্পী। গোলাম মওলা রনি - লেখক, সমালোচক ও রাজনীতিবিদ।
পটুয়াখালী জেলার পর্যটন
পটুয়াখালী জেলায় পর্যটন এলাকাও আদর্শ স্থানগুলির মধ্যে একটি। এখানে অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষ ভ্রমণ করতে আসে।
হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার, পটুয়াখালী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, কুয়াকাটা ইকোপার্ক, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি, মহেন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়ি, কানাই বলাই দীঘি, ফাতরার চর, কুয়াকাটা বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনোলজি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত, জাহাজমারা (সখিনা পার্ক), তুফানিয়ার চর, কলাগাছিয়ার চর, কুয়াকাটা রাখাইন গ্রাম, মজিদবাড়িয়া মসজিদ, সীমা বৌদ্ধ বিহার, বীজ বর্ধনের খামার, পায়রা বন্দর, জল জাদুঘর, কেশব পুর সিকদার বাড়ি, ঘসেটি বিবি মসজিদ, প্রিন্স চন্দ্রাদীর চন্দ্র উদ্দিনের চর। আউলিয়ার মাজার – কালাইয়া, মদনপুরা মৃৎপাত্র, কালিশুরী ইসাখা মসজিদ, শেরে বাংলার পিতামহের পৈতৃক বাড়ি, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা ব্রিজ, কনকদিয়া পালপাড়া মৃৎপাত্র, কনকদিয়া পালপাড়া ঐতিহাসিক কোম্পানি পুকুর।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালীর সবচেয়ে সুপরিচিত পর্যটন কেন্দ্র। এখানে আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখতে পাবেন। ফাতরার চর: ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি সুন্দরবনের অংশ। লেবুর চর:লেবুর চর একটি ছোট দ্বীপ। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
পটুয়াখালী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছে। পটুয়াখালী জেলা অবশ্যই একটি অসাধারণ ভ্রমণ গন্তব্য।
F A Q
পটুয়াখালী জেলা কোথায় এবং কী?
পটুয়াখালী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটি বরিশাল বিভাগে অবস্থিত।
পটুয়াখালী জেলায় আকর্ষণের বিষয়গুলো কী কী?
পটুয়াখালীতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রয়েছে এবং এটিই পটুয়াখালীর প্রধান আকর্ষণ। লাল কাঁকড়ার সৈকত এবং ফাতরা বনও সুপরিচিত।
পটুয়াখালী জেলা কী?
পটুয়াখালী জেলায় মোট আয়তন ৩,২২১ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি বৃহৎ জেলা।
পটুয়াখালী জেলায় অর্থনীতি কীসের উপর নির্ভর করে?
পটুয়াখালীর অর্থনীতি মূলত কৃষি ও মৎস্য চাষ। বিশেষ করে ধান ও মাছ চাষ।
পটুয়াখালী জেলায় ঐতিহাসিক স্থানগুলো কী কী?
ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য দুমকি জমিদার বাড়ি, কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির এবং গঙ্গামতির চর মসজিদ।