নড়াইল জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

- আপডেট সময় : ০১:১০:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪ ৩০১ বার পড়া হয়েছে
নড়াইল জেলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত,জানা যায় যে প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলটি একটি শহর হিসেবে বিদ্যমান।
নড়াইল জেলার ভৌগোলিক অবস্থান:
এই অঞ্চলটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত। গোপালগঞ্জ এই জেলার সর্বপূর্ব অংশ, যার পশ্চিম অংশে যশোর ও মাগুরা এবং উত্তর অংশে গোপালগঞ্জ ও মাগুরা অন্তর্ভুক্ত। বাগেরহাট ও খুলনা দক্ষিণ অংশে অবস্থিত।
নড়াইল জেলার ইতিহাস
নড়াইল জেলার একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক অতীত রয়েছে। এখানে অসংখ্য ঐতিহাসিক ভবন এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় মন্দির রয়েছে। নড়াইলের নামকরণ কীভাবে হয়েছিল সে সম্পর্কে অসংখ্য তত্ত্ব রয়েছে।
১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয় । পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা থানা এবং অভয়নগর থানা এই মহাকুমা ভুক্ত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রশাসনিক সীমানা পূর্নগঠনের সময় অভয়নগরের পেড়লী, বিছালী ও শেখহাটি এই তিনটি ইউনিয়নকে নড়াইল জেলা ভুক্ত করে অবশিষ্ট অভয়নগর যশোর জেলা ভুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় এই মহাকুমায় চারটি থানা ছিল ।

নড়াইল জেলার নামকরণ:
গবেষক এস,এম রইস উদ্দীন আহমদ এর মতে লড়েআল হতে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। যারা শক্রর বিরুদ্ধে লড়াই করে স্থানীয় ভাষায় তাদের লড়ে বলে । হযরত খান জাহান আলীর সময়ে রাজ্যের সীমান্তে সীমান্ত প্রহরী নিয়োজিত ছিল। নড়াইল এলাকা নদী নালা খাল বিল বেষ্টিত । খাল কেটে রাজ্যের সীমান্তে পরীখা তৈরী করা হত। খাল বা পরীখার পাশে চওড়া উচু আইলের উপর দাড়িয়ে লড়ে বা রক্ষী সেনারা পাহারা দিত।
নড়াইলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান:
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতি জাদুঘর: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরের স্মৃতিস্তম্ভ।

গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ,,কদমতলা মসজিদ,নলদীতে গাজীর দরগা,রামকৃষ্ণ মিশন-ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশে,নড়াইল জমিদার বাড়ি,হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি,এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়,উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী,জোড় বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত রাধাগোবিন্দ মন্দির,
লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী,নিশিনাথতলা,মধুমতি নদীর উপর নির্মিত চাপাইল সেতু,আঠারো বাকি নদীর তীরবর্তী দৃশ্য,চিত্রা রিসোর্ট,নিরিবিলি পিকনিক স্পট,স্বপ্নবিথী
অরুণিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাব,হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি পার্ক,অমৃত নগর কাচারী বাড়ি-নড়াগাতী,শ্রী শ্রী গঙ্গাধর পাগলা ঠাকুরের আশ্রম -নড়াগাতী,উইলিয়াম ফোর্ট খাল-নবগঙ্গা এবং মধুমতি নদীর সংযোগের জন্য খনন করা হয়।

Credit: m.youtube.com
নড়াইলের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী – বীর উত্তম,পণ্ডিত রবিশংকর,উদয় শংকর,সৈয়দ নওশের আলী- ফজলুল হক মন্ত্রী সভার মন্ত্রী,অমল সেন-তেভাগা আন্দোলনের প্রাধান নেতা, এস এম সুলতান-বিখ্যাত চিত্রশিল্পী,বিজয় সরকার – চারণ কবি ।
নূর মোহাম্মদ শেখ-বীরশ্রেষ্ঠ, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা – সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ও সাবেক সংসদ সদস্য,ড. রথীন্দ্রনাথ বোস-রসায়নবিদ,কবিয়াল বিজয় সরকার-বিখ্যাত কবিগান গায়ক,ডাঃ নীহার রঞ্জন গুপ্ত-প্রায় ৫০টি উপন্যাসের লেখক,কমলদাশগুপ্ত- নজরুল সঙ্গীত শিল্পী,শেখ আব্দুস সালাম- সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বুদ্ধীজীবি,কাজী সাজ্জাদ হোসেন–কুয়েটের উপাচার্য। আবদুল জলিল শিকদার,হেমন্ত সরকার,বীর উত্তম মুজিবর রহমান।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিঠান:
নড়াইল জেলার কলেজ ১৭টি, কারিগরি কলেজ ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৯৪টি, জুনিয়র হাইস্কুল ২২টি, মাদ্রাসা ৮৫টি, মক্তব ১৬০টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৮৭টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১টি, আর্ট স্কুল ১টি, বৃত্তিমূলক স্কুল ১টি, কারিগরি স্কুল ৩টি, অন্ধদের স্কুল ১টি, কিন্ডার গার্ডেন ২টি, কমিউনিটি স্কুল ৬টি এবং স্যাটেলাইট স্কুল ১৯টি এছাড়াও আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আরও জানুন-গাইবান্ধা জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
নড়াইলের অর্থনীতি:
নড়াইল জেলার আয়ের প্রধান উৎস কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। এই জেলার প্রধান রোপণ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট গম এবং স্থানীয় গাছপালা। মৎস্য ও পশুপালনের অবদানের সমান গুরুত্ব রয়েছে সেচ কৃষির উপর।
এই জেলার প্রধান শস্য ধান, পাট, গম, তেল বীজ, সরিষা, আলু, আখ, কলাই ও খেসারী। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত শষ্যের মধ্যে রয়েছে নীল, কাউন, তুলা ও বার্লি। প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, জাম, নারিকেল ও সুপারী।
বৃহৎ ও মাঝারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে বস্ত্রকল ১টি, বিস্কুট কারখানা ৬টি, কলম শিল্প ১টি, করাত কল ৪২টি, বরফ কারখানা ১৮টি, চাল ও আটা কল ৪৫টি, হলুদ মেশিন ৬টি, ওয়েল্ডিং ৭৩টি এবং ছাপাখানা ৪টি। কুটির শিল্পের মধ্যে তাঁত, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, দরজী ছাড়াও আরও অনেক শিল্প ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
নড়াইলের সংস্কৃতি:
নড়াইল জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই স্থানে ঐতিহ্যবাহী মেলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের লোক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইলের বাসিন্দারা ধর্মীয় এবং অতিথিপরায়ণ।
বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নড়াইলের বিখ্যাত ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
Frequently Asked Questions
নড়াইল জেলা কোথায় অবস্থিত?
নড়াইল জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম চতুর্ভুজে অবস্থিত। খুলনা বিভাগ এই জেলাকে তার অপরিহার্য উপাদানগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করে।
নড়াইল জেলায় কেন্দ্রীয় অর্থনীতির কার্যকারিতা কী?
জেলাটি মূলত তিনটি শিল্পকে সমর্থন করে: কৃষি, মাছ চাষ এবং ক্ষুদ্র উৎপাদন। এই এলাকার স্থানীয় অর্থনৈতিক জীবন পাট এবং ধান কৃষি চাষকে অগ্রাধিকার দেয়।
নড়াইল জেলার কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করে?
নড়াইলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং লোহাগড়া সরকারি কলেজ।
নড়াইল জেলা পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে কোন প্রাথমিক স্থানগুলি ?
নড়াইল জেলার বিশিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে নড়াইল সরকারি উদ্যান, শংকর মঠ এবং কালিয়া শিব মন্দির।
নড়াইল জেলা জুড়ে কোন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চিহ্নিত করতে পারি?
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলির মধ্যে, পুথিপাঠ এবং বাউল গান এবং লোকনৃত্য বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে।