চুয়াডাঙ্গা জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

- আপডেট সময় : ০১:১০:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৯৭ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা বিভাগের অন্তর্গত, ভারতের সীমান্তবর্তী পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। এই জেলার অনেক ইতিহাস রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার নামের উৎপত্তি
চুয়াডাঙ্গা জেলার নাম চুয়া এবং ডাঙ্গা দুটি উপাদানকে একত্রিত করেছে। চুয়াডাঙ্গার চুয়া অংশটি এর জলজ উৎসের জলজ উৎস থেকে উদ্ভূত। ‘ডাঙ্গা’ অর্থ একটি উঁচু স্থান।
গ্রীক ঐতিহাসিকরা লিপিবদ্ধ করেছেন যে গঙ্গারিদ্ধি ছিল এই নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি বিশিষ্ট রাজ্য। ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে গঙ্গা চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত একটি শহরের নাম ছিল। ঐতিহ্য অনুসারে, চুয়াডাঙ্গা নামটি চুঙ্গো মল্লিকের বংশধরের নামানুসারে এসেছে যিনি এই অঞ্চলে মল্লিক বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অনেক লোক বিশ্বাস করেন যে এই স্থানে অসংখ্য ইঁদুরের উপদ্রব ছিল। প্রাণী প্রজাতির ইঁদুরের হিন্দি নাম চুহা। চুয়াডাঙ্গা নামের বিবর্তন শুরু হতে পারে যখন কেউ চুহাডাঙ্গার বানান পরিবর্তন করে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস:
নবদ্বীপ জয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর বিজয়ের ফলে চুয়াডাঙ্গায় অসংখ্য সাধু, দরবেশ এবং সাধারণ মানুষ আসেন। আলীবর্দী খায়েরের অধীনে বর্গী আক্রমণ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে অসংখ্য মানুষ নদীপথে চুয়াডাঙ্গায় এসে স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার চুয়াডাঙ্গাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করে।
বিভিন্ন রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার ঠিক ৯ দিন আগে চুয়াডাঙ্গা পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়।
প্রথম অস্থায়ী রাজধানীর কার্যক্রম চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যেই স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাক বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি এই জেলার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশের দ্বিতল রেলওয়ে স্টেশনটি কেবলমাত্র আলমডাঙ্গায় অবস্থিত যা চুয়াডাঙ্গার অন্তর্গত।
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা মহকুমা বিলুপ্ত করে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা জেলার মর্যাদা প্রদান করে। এই সময় চুয়াডাঙ্গা মহকুমায় চারটি থানা উন্নীত করে উপজেলা করা হয়। চুয়াডাঙ্গার পাশাপাশি আলমডাঙ্গা, জীবননগর এবং দামুড়হুদায় অবস্থান রয়েছে।
ভিডিও ক্রেডিট: EKHON TV
চুয়াডাঙ্গার ঐতিহাসিক ব্যক্তিবর্গ:
হারুনুর রশীদ (বীর প্রতীক) – খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ বীরপ্রতীক।
আকরাম আহমেদ (বীর উত্তম) – খেতাবপ্রাপ্ত বীর উত্তম।
খোদা বক্স সাঁই – (গীতিকার) সুরকার ও গায়ক – ১৯৯১ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত
সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য – প্রখ্যাত সাহিত্যিক, পুরোহিত দর্পণ প্রণেতা।
অনন্তহরি মিত্র (১৯০৬ – ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬) – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী।
রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ :
মোজাম্মেল হক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি, সাবেক সংসদ সদস্য।
আসহাব-উল-হক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যিনি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও তৎকালীন কুষ্টিয়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
শামসুজ্জামান দুদু – সাবেক সংসদ সদস্য।
মিঞা মোহাম্মদ মনসুর আলী, রাজনীতিবিদ।
আলী আজগার টগর, সংসদ সদস্য, চুয়াডাঙ্গা-২
শিল্প ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ :
বেবী ইসলাম- প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, চিত্রগ্রাহক ও চলচ্চিত্র পরিচালক (তিনবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন)।
শফিক তুহিন – বাংলাদেশের জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী। সেরা গীতিকার হিসেবে তিনি ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
ফিরোজা বারী মালিক, প্রখ্যাত নারী নেত্রী এবং সমাজসেবিকা।
টিনা খান, অভিনেত্রী ও প্রযোজক।
নাজনীন হাসান চুমকি, অভিনেত্রী ও পরিচালক।
আব্দুস সেলিম, শিক্ষাবিদ, লেখক এবং অনুবাদক। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

চুয়াডাঙ্গা জেলার পর্যটন স্থান
চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনেক সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান পর্যটন স্থানের নাম দেওয়া হলো:
- আলমডাঙ্গা
- দর্শনা
- জীবননগর
- মেহেরপুর
চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনীতি
চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই জেলায় প্রধানত ধান, পাট, আখ এবং সবজি চাষ করা হয়। এছাড়াও, মৎস্য চাষ এবং পশু পালনও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ধান চাষ
ধান চাষ চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান কৃষি কার্যক্রম। এখানকার মাটি ও জলবায়ু ধান চাষের জন্য উপযুক্ত।
পাট চাষ
পাট চাষও চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি কার্যক্রম। পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষা
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো সুযোগ আছে;
সরকারি কলেজ
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ জেলার অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রদান করে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
চুয়াডাঙ্গা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একটি বিখ্যাত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালিত হয়।
জেলার স্বাস্থ্যসেবা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশ কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
সদর হাসপাতাল
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল জেলার প্রধান হাসপাতাল। এখানে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এটি এলাকার মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
মানুষ এই অঞ্চলটিকে তার ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য স্বীকৃতি দেয়। এই এলাকার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে বাউল গান, পালাগান এবং ঐতিহ্যবাহী লোক সুর রয়েছে।
বাউল গান
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বাউল গান রয়েছে। এই এলাকার স্থানীয় মানুষ বাউল গানের মাধ্যমে তাদের আবেগগত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়।
পালাগান
চুয়াডাঙ্গা জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পালাগানের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সেখানে এই প্রকাশভঙ্গিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এর ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং শিক্ষা সবকিছুই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের অবদান দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা আমাদের গর্বের স্থান।
F A Q
চুয়াডাঙ্গার অবস্থান কোথায়?
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত, এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
চুয়াডাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান কি?
অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হলো দর্শনা রেলস্টেশন।
চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কি?
প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হলো কৃষি, বিশেষ করে তামাক ও পান চাষ।
চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব কারা?
বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল হক।
প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কি?
প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও চুয়াডাঙ্গা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।
প্রধান পর্যটন স্থান কোনটি?
প্রধান পর্যটন স্থান হলো তিতুদহের শাহী মসজিদ।