কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

- আপডেট সময় : ০১:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
- / 453
কিশোরগঞ্জ জেলার অবস্থান বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলাগুলির মধ্যে একটি। প্রকৃতি, প্রাণী, মানব ইতিহাস এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ রয়েছে এই জেলায়।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস
ইতিহাস ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৪৫ সালের পর কিশোরগঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চলের একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাক মসলিন কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা সুতানুটি সহ ৩২ পরগনা রাজা কৃষ্ণদাস বসাকের কাছে বিক্রি করেছিলেন। তাঁর সাত পুত্র ছিল। তাঁর দুই পুত্র ছিলেন কিশোর মোহন বসাক এবং ব্রজ কিশোর বসাক। শহরটি সাধারণত কিশোরগঞ্জ নামে পরিচিত, যা তাদের দুজনের জন্ম।
প্রাচীন ইতিহাস: মধ্যযুগে, কিশোরগঞ্জ অঞ্চল হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ছিল। এই অঞ্চলে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান পাওয়া যায়।
মধ্যযুগীয় ইতিহাস: মুসলিম শাসনামলে মধ্যযুগে কিশোরগঞ্জ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা এবং দরগা নির্মিত হয়েছিল।
আধুনিক ইতিহাস: পরবর্তী যুগে কিশোরগঞ্জ জেলা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা বলে মনে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই জেলার বাসিন্দারা একটি অনন্য অবস্থান অর্জন করেছিলেন।
ভিডিও ক্রেডিটঃ PORJOTOK
কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ
কিশোরগঞ্জ জেলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাদের অনেকেই জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ঈসা খান – বাংলার শাসক। সত্যজিৎ রায় – একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক। সুকুমার রায় – কবি, গল্পকার, নাট্যকার। ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী – নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে একজন সৈনিক। সৈয়দ নজরুল ইসলাম – প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং চার জাতীয় নেতার মধ্যে প্রথম। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম-আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিতারা বেগম, বীরপ্রতীক মো. জয়নুল আবেদীন – বাংলাদেশী শিল্পী। জিল্লুর রহমান – বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ – বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। শাফায়াত জামিল- সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তা, বীর বিক্রম।
আরও পড়ুন – গোপালগঞ্জ জেলার পরিচিতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ
নাজমুল হাসান পাপন – রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য। মির্জা-আব্বাস- ঢাকার মেয়র ও সাবেক বিএনপির মন্ত্রী। ইলিয়াস কাঞ্চন – চলচ্চিত্র অভিনেতা। অমিতাভ রেজা চৌধুরী – চলচ্চিত্র পরিচালক। এম এ মতিন – বীর প্রতীক। মাজহারুল ইসলাম হিমেল - ফুটবল। মুহিউদ্দীন খান: বাংলা সীরাত সাহিত্যের জনক। মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া – বীর প্রতীক। মোনায়েম খান রাজু - ফুটবল খেলোয়াড়। খায়রুল জাহান – বীর প্রতীক। লিলু মিয়া: বীর বিক্রম। আতহার আলী – ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা। ফরিদ উদ্দিন মাসউদ – ধর্মতত্ত্ববিদ। মনির উদ্দিন ইউসুফ – ফার্সি ইতিহাসবিদ-শাহনামা গ্রন্থের অনুবাদক।
আব্দুল মুবীন – সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত)। এ কে এম শামসুল হক – প্রাক্তন এমপি, একুশে পদক বিজয়ী। নীহার রঞ্জন রায় – ইতিহাসবিদ। আবুল ফতেহ – কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদ। জহুরুল ইসলাম – শিল্পপতি। আইভি রহমান – সংরক্ষিত আসনের এমপি। আবুল কাসেম ফজলুল হক – উল্লেখযোগ্য লেখক। ওসমান গণি একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানী। ওসমান ফারুক (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী)। ল্যান্স নায়েক আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার – বীর উত্তম। মোশাররফ হোসেন রুবেল – প্রাক্তন ক্রিকেটার।
কিশোরগঞ্জ জেলার অর্থনীতি
কিশোরগঞ্জ জেলার অর্থনীতি হাওরের মধ্য দিয়ে চলে। হাওরে প্রচুর পরিমাণে মাছ রয়েছে, যা দেশের মাছের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে। পাট, ধান এবং অন্যান্য অনেক শাকসবজিও কিশোরগঞ্জে উৎপাদিত হয়, যা দেশের চাহিদা পূরণ করে এবং রপ্তানিও করে। এখানে বেশ কয়েকটি মাছ এবং হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। অনেক ছোট-বড় কারখানা চালু আছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প হল ভৈরব জুতা শিল্প।
কিশোরগঞ্জ জেলার সংস্কৃতি:
কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ঘটে। লোকসংস্কৃতি কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন ধরণের লোকসংস্কৃতি রয়েছে। যেমন: ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারিগান ইত্যাদি। ধর্মীয় উৎসব: কিশোরগঞ্জে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান, তাদের সকলেরই নিজস্ব উৎসব রয়েছে। বার্ষিক মেলা:কিশোরগঞ্জে বেশ কয়েকটি বার্ষিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেমন: অষ্টগ্রাম মেলা, কটিয়াদি মেলা ইত্যাদি।
কিশোরগঞ্জ জেলার বিখ্যাত স্থান
কিশোরগঞ্জ জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। এগুলি জনসাধারণের আকর্ষণের স্থান, যেখানে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসেন।ঐতিহাসিক স্থান: বেগমগঞ্জ কাদের মোল্লার জন্মস্থান এবং বাজিতপুর জনাব এএমএম মুহিতের জন্মস্থান। এখানে অনেক পুরাতন ভবন এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। নিকলি হাওর: নিকলি হাওর পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এর প্রচুর দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন কারণ এটি অত্যন্ত সুন্দর। ঈশা খান পল্লী: এটি ঐতিহাসিকভাবে আকর্ষণীয় একটি স্থান ইশা খান পল্লী। এটি মুঘল আমলে নির্মিত একটি দুর্গ।
শাহ মাহমুদ মসজিদ, বাজিতপুরের বেগমগঞ্জ,জঙ্গলবাড়ি দুর্গ, এগারসিন্দুর দুর্গ, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, পাগলা মসজিদ পাগলা মসজিদ, শহীদী মসজিদ কিশোরগঞ্জ, চন্দ্রবাটি, দিল্লি আখড়া, আওরঙ্গজেব মসজিদ, মানব বাবুর বাড়ি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু, তালজঙ্গা জমিদার বাড়ি, নিকলি বাঁধ।
F A Q
কিশোরগঞ্জ জেলা কোথায় অবস্থিত?
এটি বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থলে কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্বে ময়মনসিংহ এবং দক্ষিণে নরসিংদী জেলা অবস্থিত।
কিশোরগঞ্জ জেলার আকর্ষণীয় বিষয় কী?
কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল এর হাওর (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক এবং আকর্ষণীয় নিকলি)।
কিশোরগঞ্জের কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি কারা?
কিশোরগঞ্জের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, লেখক সেলিনা হোসেন, কবি নরেশ গুহ।
কিশোরগঞ্জে কীভাবে যাবেন?
কিশোরগঞ্জে যাতায়াতের জন্য বাস, ট্রেন এবং জলপথে যাতায়াত করা যায়। রাজধানী ঢাকা থেকে এটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কিশোরগঞ্জের জনপ্রিয় খাবার কী কী?
কিশোরগঞ্জের জনপ্রিয় খাবার হল চিড়া-মুড়ি, হাওর, মাছ এবং মিষ্টি।