ঢাকা বিভাগের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ঢাকা বিভাগ এর পরিচিতি ও ইতিহাস বর্ণনা।

- আপডেট সময় : ০৪:৩২:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
- / 840
ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশের রাজধানী, ঢাকা শহর কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঢাকা বিভাগ, দেশের সবচেয়ে জনবহুল এবং অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় অঞ্চল। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যময় জনজীবন একে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান করে তুলেছে।
ইতিহাসের পাতায় ঢাকা:
প্রাচীন যুগ: ঢাকার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। বিভিন্ন সময়ে এটি কামরূপ সাম্রাজ্য, হিন্দু শাসন, দিল্লি সালতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।
মুঘল আমল: মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী করা হয়। এই সময় ঢাকা শহরের উন্নতি সাধিত হয় এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়।
ব্রিটিশ শাসন: ব্রিটিশরা বাংলায় আধিপত্য বিস্তার করলে ঢাকা তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকাকে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানী করা হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রাম: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।
স্বাধীন বাংলাদেশ: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা দেশের রাজধানী হিসেবে নিজের গুরুত্ব বজায় রাখে।
ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি:
প্রশাসন ১৮২৯ সালে বিভাগ গঠিত হয়। ১৮৬৪ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি এবং ১৯৬০ সালে এটিকে টাউন কমিটিতে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তর এবং ১৯৮৩ সালে একে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। তারপর ১৯৯০ সালে ঢাকা শহরকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়।
ঢাকা বিভাগের বৈশিষ্ট্য:
ভৌগোলিক অবস্থান: বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত।
জনসংখ্যা: ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল বিভাগ। এখানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ বাস করে।
অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এখানে দেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক অবস্থিত।
সাংস্কৃতি: সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে।
শিক্ষা: দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত।
পরিবহন: সড়ক, রেল এবং নৌপথে পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান।
ঢাকা বিভাগের গুরুত্ব:
রাজনৈতিক কেন্দ্র: দেশের রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব অপরিসীম।
অর্থনৈতিক কেন্দ্র: দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র: বাংলাদেশের সংস্কৃতির ধারক হিসেবে একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
বাংলাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত , ঢাকা শহরের সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাগের অন্তর্গত গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং কিশোরগঞ্জ জেলা। সৌন্দর্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোনারগাঁও, লালবাগ ফোর্ট, সাতগাম্বুয়া মসজিদ ইত্যাদি।
জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব:
সবচেয়ে জনবহুল বিভাগ। দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ এই বিভাগে বাস করে। ঢাকা জনঘনত্ব বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের মধ্যে অন্যতম।
বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ:
নবাব আবদুল গনি,নবাব খাজা আহসান উল্লাহ,খাজা সলিমুল্লাহবা নবাব সলিমুল্লাহ,নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ বাহাদুর, নবাব সলিমুল্লাহ, শামসুর রাহমান, আব্দুর রহমান বয়াতী, শৈলেশ দে, সাদেক হোসেন খোকা, এ.কে.এম. রহমতুল্লাহ, সাহারা খাতুন, জিয়াউর রহমান খান, আতাউর রহমান খান, নাজমুল হুদা, আমানউল্লাহ আমান, আজম খান, আবুল হাসনাত, সালমা ইসলাম
নসরুল হামিদ, আব্দুল মান্নান খান, কাজী ফিরোজ রশীদ, নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্, আগা খান মিন্টু, সালমান এফ রহমান, এনামুর রহমান, বেনজির আহমেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবের হোসেন চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, নুরুল ইসলাম বাবুল।

ঢাকা বিভাগের ঐতিহাসিক স্থান:
শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বোটানিক গার্ডেন, স্বাধীনতা হল; মন্দির: ঢাকেশ্বরী মন্দির; প্রাসাদ: আহসান মঞ্জিল, হোসেনী দালান, ছোট কাটরা, বড় কাটরা।
বিনোদনমূলক এবং প্রাকৃতিক স্থান:
রমনা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী গার্ডেন, ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন বাংলাদেশ, ঢাকা চিলড্রেনস পার্ক, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার, বলধা গার্ডেন,রোজ গার্ডেন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, হাতিরঝিল।
ঢাকা বিভাগের নদী:
যথা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী ইছামতি।
স্মারক এবং স্মারক:
জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, অপরাজেয় বাংলা, রায়ের বাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আসাদ গেইট , তিন নেতার সমাধি।
ঢাকা বিভাগের আধুনিক স্থাপত্য:
জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, ভাসানী নভোথিয়েটার, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, হাতিরঝিল।
অর্থনীতি:
বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক অবস্থিত। তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া, পাট ইত্যাদি শিল্প অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংস্কৃতি:
সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে। ঢাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংগীত, বাংলা চলচ্চিত্র এবং বাংলা খাবার।
শিক্ষা ব্যবস্থা:
দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢাকা বিভাগের পরিবহন ব্যবস্থা:
সড়ক, রেল এবং নৌপথে পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। ঢাকা শহরের মধ্যে যানজট একটি বড় সমস্যা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করছে।
ঢাকা বিভাগের সমস্যা:
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান, পরিবহন, এবং স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ দূষণ: শিল্প কারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস এবং বর্জ্য পদার্থ পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়েছে।
জলাবদ্ধতা: বর্ষাকালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দেয়।
ঢাকার চ্যালেঞ্জ:
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পরিবেশ দূষণ: দূষণ, যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সমস্যা বিভাগকে বিপন্ন করছে।
অবকাঠামোর অভাব: দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে অবকাঠামো গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকার ভবিষ্যৎ:
বাংলাদেশের উন্নয়নের ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করবে। সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। মেট্রোরেল,ফ্লাইওভার ইত্যাদি পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি এই বিভাগের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।