অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভের কারণ ।
- আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
- / 63
অটোরিকশা- চালকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। সব ধরনের দাবি নিয়ে তারা রাজপথে নেমেছে। এই প্রতিবাদের কিছু ভিত্তি আছে। অটোরিকশা চালকদের তাদের প্রধান দাবিগুলো; হাইকোর্টের নোটিশ বন্ধের দাবি। নতুন লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা। অন্যান্য ধরণের যানবাহনের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ এর দাবি।
ঢাকার আগারগাঁও, মহাখালী, গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও ডেমরার ব্যাটারি অটোরিকশা চালকরা তাদের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। এই আন্দোলনের ফলে এসব এলাকার প্রধান সড়কে যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষদের।
হাইকোর্টের রায়ের সিদ্ধান্ত:
চালকরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ শুরু করেছে যার ফলে ব্যাটারি অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং রাস্তায় পুলিশের ধরপাকড় শুরু করা হয়েছে। এই ব্যক্তিরা বলেছেন যে এই নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত তাদের আয়কে হ্রাস করছে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান:
গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেয় রিকশাচালকরা। রিকশাচালকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধাওয়া করে। এ সময় চালকরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। ভাঙচুরকারীদের হামলায় এই বাহিনীর গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশেপাশের অন্যান্য ভবনগুলোও বিকৃত হয়ে গেছে। উস্কানিমূলক রিকশাচালকরা শপিং মল, বিভিন্ন ক্লাব ও ব্যাংকের বুথ ভাঙচুর করে। বেলা ৩টার দিকে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা রেললাইন থেকে তাদের উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে এসকেএস শপিং মলে নিয়ে যায়। এরপর তারা তাণ্ডব চালায়, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন চত্বরে অগ্নিসংযোগমূলক স্লোগান দেয়।
অটোরিকশার চলাচল নিয়ে আপত্তির কারণ নিয়ন্ত্রণহীন গতি:
কেউ কেউ স্পিডে চালায়। ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহনের কারণে সারাদেশে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মাঝে ৫৮২টিই ছিল মারাত্মক। পায়ে চালিত রিকশা চালাতে অসুবিধা হওয়ার কথা বলেছেন। কিছু মানুষের বয়স বাড়ার পর পায়ে চালিত রিকশা চালানোটা কঠিন হয়ে পড়ে তার জন্য তারা অটোরিকশা চালানোর আগ্রহী। অনেকেই বলছেন ,সরকার মেইন রোডে ওঠাটা নিষেধ কইরা দিক। কিন্তু তারা গলিতে তো চালাতে পারে, এগুলোর জন্য তাদের আন্দোলন।
অটোরিকশা প্রকৃত সংখ্যা:
কোনো বিভাগেই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বা অন্যান্য নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা নেই। কিন্তু ২০১০ সালে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের একাধিকবার বৈঠকে বলা হয়েছিল যে বর্তমানে মোট ১০০০০০ থ্রি হুইলার বিভিন্ন রাস্তায় অবৈধভাবে চলাচল করছে। বিআরটিএ এবং অন্যান্য যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ এবং অন্যান্য সূত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন আনুমানিক ৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যাটারি চালিত এবং ইঞ্জিন চালিত থ্রি হুইলার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ মিলিয়ন ঢাকার বাইরে। আর ঢাকায় রয়েছে প্রায় ১০ লাখ। যদিও কেউ কেউ আশা করছেন যে ব্যাটারি চালিত এবং ইঞ্জিনচালিত রিকশার সংখ্যা ১.৫ মিলিয়নের বেশি হবে।
সরকারি নথি অনুযায়ী:
দেশে প্রায় ৬.২ মিলিয়ন যানবাহন নিবন্ধিত এবং এগুলো বৈধ। কিন্তু সরকারি নথি অনুযায়ী সড়কে প্রায় ৭০ লাখ ‘অবৈধ’ থ্রি-হুইলার রয়েছে। বাস এবং মিনিবাস, যা আইনী গণপরিবহন যান, মোট সংখ্যার মাত্র এক শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের এই ঘাটতিকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রযুক্তিগতভাবে নিম্নমানের তিন চাকার ব্যাটারিচালিত ও ইঞ্জিনচালিত রিকশায় ভরে গেছে। এই যানবাহনগুলিকে এখন বাড়তে দেওয়া হচ্ছে এবং পরিবহনে প্রবেশের জন্য নতুন কোম্পানির পারমিট প্রদান সীমিত করে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না… পরিবর্তে, এই ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনগুলি দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধান সড়ক না, দীর্ঘমেয়াদে শাখা সড়কেও অটোরিকশা চলতে চেওয়া উচিৎ না। কারণ তার অনিয়ন্ত্রিত গতির জন্য সে নিজেকে, অন্য বাহনকে ও পথচারীকে বিপদে ফেলবে।
প্রতিবাদের প্রভাব ও সরকারি পদক্ষেপ:
এই প্রতিবাদের ফলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যানজট বেড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন ব্যবস্থা,মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত ,অর্থনৈতিক ক্ষতি।
সরকারও এই সমস্যা সমাধানে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো:ভাড়া বৃদ্ধির সমস্যার আলোকে ব্যবস্থা, নতুন লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য সহজ করা,আসন্ন সমস্যার স্থায়ী প্রয়জনীয় পদক্ষেপ,অটোরিকশা চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
শনিবার পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়:
এদিকে, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা অপারেটররা তাদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ৪৮ ঘন্টা সময়সীমার ইঙ্গিত দিয়ে শনিবার পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে।এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
অটোরিকশা চালকদের প্রতিক্রিয়া:
অটোরিকশা চালকরা সরকারের পদক্ষেপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কিছু চালক সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিছু চালক এখনও দাবিতে অটল রয়েছেন। কিছু চালক ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নন। কিছু চালক লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার ব্যাপারে খুশি।
ভবিষ্যতের করণীয়:
এই বিক্ষোভের সমাধানে ভবিষ্যতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সরকার ও অটোরিকশা চালকদের মধ্যে আরও আলোচনা করা। চালকদের যোক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার চেষ্টা। পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এবং জনগণের সুবিধার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আলোচনায় সমাধান হতে পারে।
অটোরিকশা চালকরা এখনও ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন দাবি রয়েছে। সরকার কিছু একটা করেছে। তবে সমস্যাটি পুরোপুরি সমাধান করা হয়নি। ভবিষ্যতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অটোরিকশা চালকদের প্রতিবাদ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঠিক সমাধান দরকার। আশা করা যায় সরকার ও অটোরিকশা চালকদের মধ্যে দ্রুতই এর সমাধান হবে।